রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার উদ্যোগে নগরে উদ্যানতাত্বিক ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা প্রকল্পের অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি বলেন, মৎস্য ভবন, রমনা পার্ক, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, হাইকোট ও কাকরাইল মসজিদ এর মাঝখানে অনেক বড় একটা রাউন্ড এবাইট ছিলো। রাউন্ড এবাইট থাকলেও সেটা আমাদের কোনো উপকারে আসেনি, কারণ পুরো জায়গা জুড়ে কতগুলো ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানো হয়েছিলো। ইউক্যালিপটাস গাছ মাটিকে শুষ্ক করে, গাছে পাখি বসে না এবং এ গাছের আশেপাশে অন্যান্য গাছে গুটি ও ফল হয় না। নারিকেল গাছ থেকে গুটি ঝরে পড়ে। সে জিনিষগুলো লাগিয়েছে নগরবিদরা, নগর পরিকল্পনাকারীরা কিংবা এ শহরে যারা কৃষিবিদ আছেন তাদের চোখের সামনে হয়েছে। সেদিন যারা এ প্রেসক্রিপশনের সহযোগি হয়েছিলেন তাদের দায়দায়িত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। এ অবস্থার পরে আজকে রাউন্ড এবাউটটা ছোট হয়েছে কিন্তু অন্তত একটা তাল গাছ আছে যার সয়েল বন্ডিং পাওয়ার সবচেয়ে বেশি।
মন্ত্রী বলেন, যে ডিভাইডারগুলা আছে এখানে কিছু কিছু গাছ দেয়া হয়েছে তারও কোনো পরিকল্পনা নাই। এখানে যদি পাকুর গাছ বা অশ্বথ গাছ দেয়া হয় তাহলে গাছগুলো থেকে যে শিকড়ের ঝুড়ি নামবে একটা সময় কেটে ফেলতেই হবে। সোজাভাবে উঠে যায় এ ধরনের গাছ অথবা একইসাথে সুগন্ধ বিলায়, অনেক বেশি পাতা এ ধরনের গাছের কথা আমি বলবো। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বলুন, ঢাকা বিউটিফিকেশন বলুন কাদের হাতে কোন ডিপার্টমেন্ট এটা জনগনের জানার অতো সময় নাই। কিন্তু যারা এখানে আছেন তাদেরকে এ কাজগুলো চিন্তা ভাবনা করেই করতে হবে। গ্রামে একটা কথা আছে মামা কইলো বানতে ধান বাইনা আনলাম ওদা ধান। এ ধরনেরভাবে কাজ করলে নগর কৃষি বা নগরের সবুজায়ন এ জায়গাটিকে আমরা সঠিকভাবে রক্ষা করতে পারবো কিনা এটা যেকোনো কেউ প্রশ্ন করতে পারে। ফ্ল্যাট বাড়িতে আগে কার্ণিশ ছিলো টব রাখা যেতে এখন আর সে অবস্থা নেই। রাজউকের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি একজন পাবলিক হিসেবে রাজউকের কোনো নজরধারি দেখছিনা। দুইটা বিল্ডিং এর মাঝখানে যে জায়গাটুকু রাখা দরকার সেটাই আপনারা ডিজাইন পাস করলেন কিন্তু সেটা ইমপ্লিপেন্ট হলো কিনা সে ব্যাপারে আপনাদের বিন্দু মাত্র নজরদারি নাই। আমি একজন মন্ত্রী থাকি ফ্ল্যাট বাড়িতে। আমাদের পাশ দিয়ে একটি বিল্ডিং উঠতে গেলো আমাদের দেয়াল ঘেষে। অন্তত ৫দিন আমার পিএস গিয়ে আপনাদের অফিসারকে এনে মূল ডিজাইন অনুযায়ী এখন ভিত করা হচ্ছে। সবাই তো মন্ত্রী না, আর সবাইর এতো লেগে থাকারও অভ্যাস নাই। এভাবে যদি আপনারা গায়ে গায়ে বিল্ডিং লাগান তাহলে কিভাবে কোথায় কোন গাছ হবে আর কোথায় কোন সবুজায়ন হবে এ প্রশ্নের উত্তর রাজউককে দিতে হবে। আমাদের ওয়ার্ড কমিশনার, অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও এনজিওদের এ বিষয়ে সংযুক্ত করে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়াও আমাদের যারা অবসরপ্রাপ্ত কৃষিবিদ আছেন এবং অবসর জীবযাপন করছেন তারা যদি সমন্বিতভাবে একটা উদ্যোগ নেন তারা অনেককে এ ব্যাপারে ভালো উপদেশ দিতে পারবেন ও গাইড করতে পারবেন।
মন্ত্রী উল্লেখ করেন, আগে ঢাকার বহু বাড়িতে মৌমাছি বাসা করতো একটা মৌচাক থাকতো। বিশেষ করে পুরান ঢাকায়। কিন্তু আজকে একই সঙ্গে কন্ট্রাডিকটরী সিচুয়েশন মশার ঔষুধ দেন মৌমাছি মরে যাবে। আবার অন্যদিকে গাছে ফুল নাই মৌমাছির খাবার নাই, পরাগায়ন নাই। একটা শহরে যদি মৌচাক থাকে তাহলে বুঝতে হবে, সেখানে সবুজের অস্তিত্ব আছে, সেখানে ফুল ফোটে, সেখান থেকে মৌমাছি তার খাবার আহরণ করে। সবাই মিলে যদি আমরা উদ্যোগ নেই, সচেতনতা বৃদ্ধি করি তাহলে আজকে আমাদের আরবান হর্টিকালচার প্রোডাকশন এবং নিউট্রিশন সিকিউরিটি সার্থক হবে। কাজের জন্য ভালোবাসা ও অনুসন্ধিৎসু চিন্তা এ দুটার সমন্বয় ঘটানো দরকার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কথা বললে আমরা শহরে আছি, গ্রামে আছি, কৃষকের পাশে আছি, আবার সৌখিন কৃষকের পাশে আছি, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের পাশে আছি, গৃহীনিদের পাশে আছি। শহরের আইলেন্ডগুলোতে মেটালিক ভাস্কর্যের করার বদলে একটু গাছ লাগান। যেগুলি দৃষ্টিনন্দন, সুঘ্রান ছড়াবে এবং পাখি আকর্ষন করবে। জাপানের উদাহরন দিয়ে মন্ত্রী বলেন, টোকিও শহরে দেড় ডিগ্রি দিনের তাপমাত্রা কমাতে সক্ষম হয়েছে কেবল আরবান হর্টিকালচারের মাধ্যমে।
কৃষি সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. কামাল উদ্দীন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজউকের চেয়ারম্যান বজলুল করিম চৌধুরী। কর্মশালায় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত করেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি মি. মাইক রবসন এবং প্রকল্পের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন এফএও এর জাতীয় কনসালটেন্ট ড. অনিল কুমার দাশ।